রানী ভবানী একটি পরিচিত নাম। কিন্তু আমরা ক’জন জানি রানীভবানীর বাবার বাড়ি (Rani Bhabani’s Father’s House) বগুড়ার সান্তাহারের পার্শ্ববর্তী ছাতিয়ানগ্রামে। আর সেখানেই এককালের অর্ধে বঙ্গেঁশ্বরী পরিচিতি ‘রানীভবানীর’ বিজরিত ছাতিয়ানগ্রামে তার স্মৃতি টুকু ও আজ ধংশের পথে। প্রচলিত আছে সপ্তদশ শতাব্দীতে ছাতিয়ানগ্রামের জমিদার আতারাম চৌধুরী ছিলেন নিঃসন্তান। আতারাম চৌধুরী সন্তান লাভের আশায় বাড়ীর কাছে নির্জন পুকুর পাড়ে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে পূজা-অর্চনা করেন। পরবর্তীতে তার স্ত্রীর গর্ভে ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম হলে তার নাম রাখা হয় ভবানী। জমিদার যেস্থানে সাধনা করে সিদ্ধি লাভ করেন সে জায়গাটি সিদ্ধেশ্বরী নামে পরিচিত হয়ে উঠে।
ভবানীর বয়স যখন ৯/১০ বৎসর। একদিন নাটোর রাজবাড়ীর দেওয়াল (মগনেহর) দয়ারাম নবাব আলীবর্দী খানের দরবার থেকে ফেরার পথে ছাতিয়ানগ্রামে এসে রাত হয়ে যায়। সে খানে তাবু ফেলা হয় রাত্রি যাপনের জন্য। নিয়মিত প্রাতঃভ্রমনের অভ্যাস ছিল দয়ারামের। ভোরে তিনি শয্যা ত্যাগ করে বেরুলেন তাবু থেকে। দেখলেন ফুট ফুটে একটি মেয়ে লাল শাড়ী পরে পুজার জন্য ফুল তুলছে। দেওয়ান দয়ারামের পছন্দ হলো ঐ মেয়েটিকে। তিনি পিছু নিলেন মেয়েটির। পৌঁছলেন তিনি আত্মারাম চৌধুরীর বাড়ীতে জানলেন মেয়েটি আত্মারাম চৌধুরীর। নাম তার ভবানী। দেওয়ান নাটোরের রাজকুমার রামকান্তের সাথে ভবানীর বিয়ের প্রস্তাব দিলেন আত্মারামের কাছে।
দয়ারাম, ভবানীর মতামত জানতে গেলে ৩টি শর্তে বিয়েতে রাজী হন। ভবানীর শর্ত ছিলো বিয়ের পর আরও এক বছর পর্যন্ত তিনি তার বাবার বাড়ীতেই থাকবেন। আর সেই এক বছরে ছাতিয়ানগ্রামে প্রতিদিন একটি করে পুকুর খনন করে দিতে হবে। ছাতিয়ানগ্রাম থেকে নাটোর পযর্ন্ত লাল সালুর কাপড় দিয়ে ছাউনীযুক্ত নতুন রাস্তা তৈরী করতে হবে। আর এলাকার প্রজাদের ভূমিদান করে তাদের স্বাবলম্বী করতে হবে। ভবানীর শর্তগুলো পালনের চিহ্ন ছাতিয়ানগ্রামে আজও রয়েছে। ভবানীর বিয়ের পর মা জয়দূর্গা দেবী দেহ ত্যাগ করেন। রানী ভবানী তার মায়ের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য যে স্থানে তিনি মাতৃগর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়ে ছিলেন যেখানে মন্দির তৈরী করেন। যার নাম ছিল জয় দূর্গামন্দির। এই মন্দিরে তিনি প্রতিষ্ঠা করে ছিলেন অষ্টধাতু নির্মিত এক দূর্গা প্রতিমা।
রাজা রামকান্তের মৃত্যুর পর ১৭৪৮ সালে রানী ভবানী নাটোরের জমিদারি গ্রহন করে ১৮০২ সালে পযর্ন্ত পরিচালনা করেন। প্রচলিত আছে নবাব সিরাজ উদ-দৌলার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র সভায় রানী ভবানীকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু রানী ইংরেজদের বিরোধিতা করেছিলেন।
কিভাবে যাবেন?
ঢাকার গাবতলী ও মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে শ্যামলী, হানিফ, এস আর, বাবলু, টি আর ইত্যাদি বাস বগুড়ার সান্তাহারের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এইসব বাসে জনপ্রতি ভাড়া লাগবে ৩৮০ থেকে ৫০০ টাকা। এছাড়া কমলাপুর থেকে দ্রুতযান, লালমনিরহাট এবং একতা এক্সপ্রেস ট্রেনে চড়েও সান্তাহার যেতে পারবেন। সান্তাহার থেকে মাত্র ২০ থেকে ৩০ টাকা রিকশা ভাড়ায় রানী ভবানীর বাবার বাড়ি দেখতে যেতে পারবেন।
কোথায় থাকবেন এবং খাবেন?
সান্তাহারে বেশকিছু আবাসিক হোটেল, খাবার হোটেল এবং রেস্টুরেন্ট রয়েছে তাই রাত্রিযাপন কিংবা প্রয়োজনীয় খাবার গ্রহনের জন্য তেমন কোন সমস্যার সম্মুখীন হতে হবেন না।
Add Comment