সান্তাহারের ইতিহাস ঐতিহ্য

সান্তাহারের বীরের রক্তে লেখা গ্রাম আহসানপুর

shidahosanullha

আহসানপুর। লংগদু উপজেলার গুলশাখালী ইউনিয়নের একটি গ্রামের নাম আহসানপুর। আমরা আজ এমন একজন শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধার সাথে পরিচিত হবো যার রক্তের বদৌলতে একটি গ্রামের নামকরণ করা হয়েছে।
এ কে এম আহসানুল হক ১৯৫৫ সালে ১ ডিসেম্বর বগুড়া জেলার সান্তাহার-কলসা গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তিনি ছাত্র জীবনে ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী ও খেলাধুলায় উৎসাহী। সাত ভাই বোনদের মাঝে তিনি ছিলে চতুর্থ। ৮ম শ্রেণীতে কলসা আহসান উল্লাহ ইনস্টিটিউশনে অধ্যায়নরত অবস্থায় রাজশাহী ক্যাডেট কলেজে ৭ম শ্রেণীতে ভর্তি হন। রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ হতে রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডে এসএসসি মেধা তালিকায় ৭ম স্থান ও এইচএসসি পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে স্টার মার্কসসহ সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হন। ব্যক্তি জীবনে তিনি খুব প্রাণোজ্জল ও তারুণ্যে উদ্দীপ্ত একজন ব্যাক্তি ছিলেন। বইপড়া, ছবি আঁকা, খেলাধুলা ও সংস্কৃতি চর্চা নিয়ে তিনি সবসময় ব্যস্ত থাকতেন।
রাজশাহী ক্যাডেট কলেজে দশম শ্রেনী ছাত্র থাকাকালীন সময়ে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের ডাক আসলে তিনি বড় ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা: একেএম আজিজুল হকের সাথে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেন। বড় ভাই ডা: আজিজ, কৃষ্ণনগর (ভারত) মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পের চিকিৎসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আর আহসানুল হক ৭ নং সেক্টরে যোগদান করেন। ৩ ডিসেম্বর ১৯৭১ তারিখে যুদ্ধ চলাকালীন বগুড়া অবমুক্ত করবার লক্ষ্যে ধামুইরহাট হরিতকিডাঙ্গা নামক স্থানে পাক হানাদারদের সাথে বীরত্বপূর্ণ সম্মুখসমরে অবতীর্ন হন এবং শত্রুকে পরাজিত করে বগুড়া অবমুক্ত করতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।
১৯৬৬ সালে গড়ে ওঠা পার্বত্য চট্রগ্রাম উপজাতীয় কল্যান সমিতি নামের এই সংগঠনটিটিই স্বাধীনতার পর পরিবর্তিত হয়ে নতুন নাম ধারণ করে শান্তিবাহিনীতে। অনেকেই মনে করেন মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষালম্বী মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা রাজাকার ও পাকিস্তানিদের ফেলে যাওয়া অস্ত্র নিয়ে রাজাকার শান্তি কমিটির নামানুসারে গঠন করেন শান্তিবাহিনী। ৭৩-৭৪ সালে হাজার হাজার উপজাতীয় তরুন যুবককে ভর্তি করা হয় এই শান্তিবাহিনীতে। অশান্ত হয়ে ওঠে পার্বত্য চট্টগ্রাম। শুরু হয় অসুরের ঝনঝনানি ও রক্তপাত। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ৭৩-৭৪ সাল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী মোতায়েন শুরু হয়। পৃথিবীর যেখানে জরুরী পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় সেখানেই সেনাবাহিনী মোতায়েন হয়েছে। আমাদের দেশের জন্যও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। পাহাড়ে অস্থিতিশীল পরিবেশকে স্থিতিশীল করার লক্ষ্যে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে শুরু হয় “অপারেশন দাবানল”।
অপারেশন দাবানলের অংশ হিসেবে ১৯৭৮ সালে আগষ্ট মাসে ক্যাপ্টেন আহসানুল হক ৬০ জন সৈন্য নিয়ে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার দুর্গম মাইন্ডেরছড়া এলাকায় উপজাতি সন্ত্রাসী নিধন অভিযানে নেতৃত্ব দেন। ২ সেপ্টেম্বর ১৯৭৮ সালে মাইন্ডেরছড়া এলাকায় শান্তিবাহিনীর দুই শতাধিক সদস্যের বৃহৎ একটি দলের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে অবতীর্ন হন। অসীম সাহসিকতা ও বিরল নেতৃত্বের মাধ্যমে সম্মুখ লড়াই করে শত্রুকে পরাজিত করতে সক্ষম হন তিনি। লড়াই চলাকালে এক সময় শান্তিবাহিনীর একঝাঁক বুলেট এই অসীম সাহসী বীর মুক্তিযোদ্ধা তরুন সামরিক কর্মকর্তার বুক বিদীর্ণ করলে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। সেদিন ছিল শবেকদরের রাত্রি, ঠিক সূর্য উদয়ের প্রাক্কালে।
রাঙ্গামাটি পার্বত্য এলাকায় বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ লেফটেনেন্ট এ কে এম আহসানুল হক বীর বিক্রমের মৃত্যুর পর রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার লংগদু উপজেলার গুলশাখালী ইউনিয়নের বাসিন্দারা এখানে বসবাস করতে এসে ঘটনাটি জানতে পারেন। তাদের আবেগ জড়িত ভালবাসার কারণে নিজস্ব উদ্যোগে তরুন এই মহান মুক্তিযোদ্ধার নামানুসারে গুলশাখালী ইউনিয়নে “আহসান পুর” নামক এই গ্রামটির নামকরণ করা হয়।
কৃতজ্ঞতায় – এ, কে, এম আসাদুল হক বেলাল ও নাজিমুদ্দিন আহম্মেদ।
সান্তাহার ডটকম/লায়ন ফরিদ আহমেদ/১৫-০৪-২০১৬ইং