সান্তাহারে ইয়াবার ভয়াবহতা দিন দিন প্রকট আকার ধারণ করছে। বেড়েই চলেছে আসক্ত তরুণ-যুবকের সংখ্যা। স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও বাদ যাচ্ছে না। বাদ যাচ্ছে না ব্যবসায়ী, চাকরিজীবি ও বেকাররা।
সান্তাহারে দিন দিন যেভাবে ইয়াবা আসক্তদের সংখ্যা বাড়ছে তাতে যে কটি পরিবারের ছেলে-মেয়েরা এখনো এই পথে আসেনি সেই পরিবারগুলো বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।
জানা যায়, শুধু বন্ধু বান্ধব বা পরিবেশের কারণেই নয় কৌতূহলের কারণে দুই-একবার ইয়াবা সেবন করতে গিয়ে স্থায়ীভাবে ইয়াবাতে আসক্ত হয়ে পড়ে অনেবে। যাদের মধ্যে অধিকাংশই রয়েছে বিভিন্ন স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থী।
সান্তাহারের চিহ্নিত বেশ কিছু স্পস্ট আছে। সেই এলাকাগুলোতে প্রকাশ্যে বিক্রি হয় ইয়াবা। পুরুষদের পাশাপাশি মহিলারাও মুখে কাপড় পেচিয়ে কিনতে আসে ইয়াবা।
জানা যায়, নানা ধরনের নাম আর নানা দামে এই ইয়াবা বিক্রি হয়। হাতে হাতে পাচার ছাড়াও মাদকটি আকারে ছোট হওয়ায় সহজে বহন করা যায়। এ কারণে অন্য মাদকের তুলনায় ইয়াবা সেবনকারী ও বিক্রেতারা খুব সহজে নিরাপদে সেবন ও বিক্রয় করতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, সান্তাহারে ইয়াবার ভয়াবহতা বেড়েছে। যুবক থেকে শুরু করে বৃদ্ধ, তরুণ-তরুণী, শিক্ষার্থী-ব্যবসায়ী এমনকি স্বামী-স্ত্রী দুইজনই ইয়াবা আসক্ত এমনও খবর আমাদের কানে আসে। এই ভয়াবহতা কিভাবে দূর হবে। কারণ প্রশাসনের কিছু আসাধু কর্মকতা এবং রাজনৈতিক কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত। তারাই শহর সব স্পটগুলো দেখাশোনা করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরো এক ব্যক্তি বলেন, সান্তাহারে মাঝে মাঝে বাবা ছেলেকে, মা ছেলেকে পুলিশের হাতে দিয়ে আছে। কারণ তাদের ছেলে এটাই নেশায় আসক্ত যে, পরিবার থেকে কোনো ধরনের শাস্তিই তাদের এই কাজ থেকে বিরত রাখতে পারে না। তাই তাদের থানায় পুলিশে দিয়ে আসতে হয়। এই হলো আমাদের সান্তাহারের নেশার রাজ্যের খবর।
নাম প্রকাশে এক রাজনৈতিক নেতা বলেন, সান্তাহার থেকে কবে নেশার সব পণ্য দূর হবে সেটা বলতে পারি না। তবে সবাই এক সঙ্গে কাজ করলে প্রতিরোধ গড়া যাবে। কিন্তু এই কাজ করবে কে? কারণ যেই এই কাজে হাত দিবে সেই বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে সবার কাজ থেকে। তাই ইচ্ছা থাকার পরও কেউ কথা বলে না।
একটি বেসরকারি জরিপ থেকে জানা যায়, প্রতিদিন সান্তাহারের ইয়াবা সেবন কারীর সংখ্যা ৫শ এর বেশি। আর নেশায় আসক্ত তরুণ যুবকরাদের ২৫ ভাগ।
বিশেষজ্ঞদের মতামত, বেকার, হতাশাগ্রস্ত এবং কাজ না থাকার কারনেই দেশের বেশ কিছু এলাকায় ইয়াবা সেবনকারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, থাই ভাষায় ইয়াবা মানে ক্রেজি মেডিসিন বা পাগলা ওষুধ। ইয়াবা এক ধরনের মাদক যা হেরোইনের চেয়ে ভয়াবহ এবং হেরোইনের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ইয়াবার মূল উপাদান মেথ্যাম ফিটামিন ও সঙ্গে থাকে উত্তেজক পদার্থ ক্যাফিন। ২৫ থেকে ৩৫ মিলিগ্রাম মেথ্যাম ফিটামিনের সঙ্গে ৪৫ থেকে ৬৫ মিলিগ্রাম ক্যাফিন মিশিয়ে তৈরি এ ট্যাবলেটের রং সাধারণত সবুজ বা লালচে কমলা হয়ে থাকে। নথিতে বলা হয়, ইয়াবা ট্যাবলেটের স্বাদ যে কাউকে আকৃষ্ট করতে পারে এবং সেবনের পর ধরা পড়ার সম্ভাবনাও থাকে না। ইয়াবা ব্র্যান্ডের এসওয়াই, এনওয়াই ও ডব্লিউওয়াই নামের আরও তিনটি ট্যাবলেট বাজারে পাওয়া যায়। তবে এখন চার রকমের ইয়াবা বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে গাঢ় লাল রংয়ের ‘চম্পা’ প্রতি পিস খুচরা ২০০ থেকে ২৩০ টাকায় বিক্রি হয়। টেকনাফে এটি কেনা হয় ১২০ থেকে ১৫০ টাকায়। হালকা গোলাপী রংয়ের ‘আর সেভেন’ ইয়াবার দাম সবচেয়ে বেশি। এটি কমপক্ষে ৫০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। হালকা গোলাপী রংয়ের আরেক ধরনের ইয়াবার নাম ‘জেপি’। এর খুচরা মূল্য ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। ‘ডগ’ নামের মাটি রংয়ের ইয়াবা বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় প্রতিটি। এ ছাড়াও বিভিন্ন উপাদান মিশিয়ে দেশেই তৈরি হচ্ছে আরেক ধরনের ভেজাল ইয়াবা। এগুলো ১৫০ থেকে ১৭০ টাকায় পাওয়া যায়।
নিউরোলজিস্ট ডা. বদরুল আলম বলেন, এক থেকে দুই বছরের মধ্যে ইয়াবা সেবনকারীদের নার্ভগুলো সম্পূর্ণ বিকল হয়ে যায়।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আবু তাহের বলেন, ইয়াবা ক্ষুধা নষ্ট করে দেয়, খাবারে অরুচি আনে, যাতে মারাত্মক অপুষ্টি সৃষ্টি এবং শরীরের ইলেক্ট্রোলাইট ব্যালান্স নষ্ট হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. গোলাম রাব্বানী বলেন, ইয়াবা সেবনকারীরা মানসিক রোগে ভুগতে থাকে। অস্থির ভাব এবং যে কোনো সময়ে যে কোনো অঘটন তারা ঘটিয়ে ফেলতে পারে। বেশির ভাগ ইয়াবা আসক্ত সিজেফ্রেনিয়ার মানসিক রোগের শিকার হয়।
সান্তাহার ডটকম/সান্তাহার ডটকম টিম/২৪-০৪-২০১৬ইং
Add Comment