শস্যভান্ডার নামে খ্যাত সান্তাহার ধান-চাল ব্যবসায় ধস দেখা দিয়েছে। ভারত থেকে এলসির মাধ্যমে অবাধে ভারতীয় চাল আসায়, স্থানীয় বাজারগুলোতে চালের দাম না থাকায় হুমকির মুখে পড়েছে সান্তাহারের চালকল ব্যবসায়ীরা। লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যাংক ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে উপজেলার প্রায় ৬০ শতাংশ চালকলের উৎপাদন। ব্যবসায় মন্দার প্রভাবে ব্যাংক ঋণ সমন্বয় করতে না পারায়, পুনরায় নতুন করে ঋণ না পাওয়ায় গত ২-৩ বছর ধরে অনেক চালকল একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে।
সরেজমিনে জানা গেছে, সান্তাহার ও আদমদীঘির প্রায় ২২০টি হাসকিং এবং ১০টি অটোমেটিক রাইস মিল রয়েছে। এই চালকলের মধ্যে বর্তমানে ৬০ শতাংশ চালের কল বন্ধ। আর যে ৪০ শতাংশ চালকল চালু আছে তাও চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। কারণ হিসাবে ব্যবসায়ীরা বলছে গত কয়েক বছর ধরে আদমদীঘিতে বাম্পার ফলন হওয়া সত্বেও সরকার অবাধে ভারত থেকে অপ্রয়োজনে এলসির মাধ্যমে বিপুল পরিমান চাল আমদানী করায় ভারতীয় চাল দেশের বাজার দখল করে নিয়েছে। ফলে আদমদীঘির ব্যবসায়ীদের উৎপাদিত চাল স্বাভাবিক ভাবে বাজারে বিক্রি হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে ব্যবসায়ীরা বিক্রির জন্য চাউল প্রস্তুত করে গোডাউনজাত করছে। এর ফলে মজুদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর মজুদ বৃদ্ধির কারণে অনেক ক্ষেত্রে কম দামে লোকসান দিয়ে চাল বিক্রি করে ব্যবসায়ীরা আর্থিক ভাবে সর্বশান্ত হচ্ছে। এসব কারণে নতুন করে চাল উৎপাদন করতে আগ্রহ হারাচ্ছে ব্যবসায়ীরা। এছাড়া ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদের কারণে অধিকাংশ ব্যবসায়ীরা ব্যাংকের ঋণ সমন্বয় করতে না পারায় ঋণ নবায়ন হচ্ছে না আর অর্থ সংকটের কারণে ব্যবসায়ীরা নতুন করে উৎপাদনে যেতে নিরুৎসাহিত হচ্ছে। আর ব্যবসায়ীরা উৎপাদনে যেতে না পারায় ধানের নায্য মূল্য পাচ্ছে না কৃষকরা। আদমদীঘি উপজেলার আদমদীঘির হাট, সান্তাহার রাধাকান্ত হাট ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা কাজ করছে। উৎপাদিত ধান বাজারে বিক্রি করে লাভ তো দুরের কথা, উৎপাদন খরচই উঠছে না। হাটে আসা কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, ধানের গড় উৎপাদন খরচ পড়ছে মণ প্রতি ৭শ’ টাকা। সেখানে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে ৫৮০ টাকা থেকে ৬শ’ টাকা মণ দরে। কৃষক খালেক মন্ডল বলেন, জিরাশাইল, স্বর্ণা ধানের দাম ও বছরের চেয়ে মণ প্রতি ২শ’ থেকে আড়াইশত টাকা কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে কৃষকের লোকসান হচ্ছে। একই কথা বললেন হাটে ধান বিক্রি করতে আসা কৃষক হাফিজার রহমান ও আঃ হাকিম মন্ডল। চাউল কল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও নাহিদ চাউল কলের সত্ত্বাধিকারী আলহাজ্ব আহম্মেদ স্বপন বলেন, আমরা বার বার এলসির মাধ্যমে চাউল আমদানী না করার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছি। সর্বশেষ আমরা এলসির চাউলের উপর ৩০ শতংশ হারে ভ্যাট-ট্রান্স আরোপ করার দাবি জানিয়েছি। এছাড়া ব্যাংক ঋণের সুদ সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার ব্যাপারে সরকার ও ব্যাংক কর্তপক্ষের সাথে দফায় দফায় মিটিং করেও উচ্চ সুদ কমানোর ব্যাপারে এখনও কোন সুরাহা হয়নি। এ কারণে লক্ষ লক্ষ টাকা ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে ইতিমধ্যে আদমদীঘি উপজেলায় বন্ধ হয়ে গেছে ৬০ শতাংশ চাউলকল।
সান্তাহার ডটকম/সান্তাহার ডটকম/২২-মে-২০১৬ইং
Add Comment