বগুড়ার সান্তাহার জংশন স্টেশনে ব্রডগেজ ও মিটারগেজ লাইনে প্রতি ট্রেনের বগিতে গড়ে ১০ জন যাত্রী বিনা টিকিটে রেল ভ্রমণ করেন। আর এ স্টেশন দিয়ে দৈনিক ৪০টির মতো ট্রেন চলাচল করে থাকে। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহেই এ রেলস্টেশনের দায়িত্বরত চার ট্রেন টিকিট এক্সামিনারের (টিটিই) টিকিটবিহীন যাত্রীদের কাছে আদায় করেছেন প্রায় ৪ লাখ টাকা। তবে রেলের এসব দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা জানান, সবাই ইচ্ছা করে বিনাটিকিটে ভ্রমণ করেন না। অনেকেই সময় স্বল্পতার কারণে টিকিট সংগ্রহ করতে না পেরে ট্রেনের ভেতরেই তাদের কাছে ভাড়া পরিশোধ করেন।
রেলওয়ে সূত্রে জানাযায়, প্রতিদিন সান্তাহার জংশন স্টেশনের ওপর দিয়ে ঢাকা, খুলনা, চিলাহাটি, লালমনিরহাট ও পঞ্চগড় রুটের ট্রেন যাতায়াত করে থাকে। আন্তঃনগর ট্রেনের প্রতি বগিতে গড়ে ১০০ আসন থাকে। আর লোকালগুলোয় প্রায় ৫০টি। এসব রুটে দৈনিক গড়ে প্রায় ৫ হাজার যাত্রী সান্তাহার স্টেশনে ওঠানামা করেন। এসব যাত্রীদের মধ্যে চলতি বছরে বিনা টিকিটে রেল ভ্রমণ করায় জানুয়ারি মাসে জরিমানাসহ ১৫ লাখ ৪৩ হাজার ৫৩৫ টাকা, ফেব্রুয়ারি মাসে ১২ লাখ ৪০ হাজার ৭০ টাকা, মার্চ মাসে ১৩ লাখ ১৩ হাজার ৯৪০ টাকা, এপ্রিল মাসে ৭ লাখ ৬৪ হাজার ৮১৫ টাকা আদায় হয়েছে এবং একই অপরাধে মে মাসের প্রথম আট দিনে ৪ লাখ টাকা আদায় হয়েছে। তবে গত ৬ মে দিনগত রাতেই আদায় হয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা।
এসব অর্থ আদায় অভিযানে ছিলেন সান্তাহার স্টেশনের টিটিই রবিউল ইসলাম। জরিমানার বিষয়ে জানতে চাইলে রবিউল জানান, টিকিট না থাকলে জরিমানার স্থান থেকে যাত্রীকে মূল ভাড়ার সঙ্গে সর্বনিম্ন ৫০ টাকা জরিমানা যোগ করা হয়। তবে কেউ অসদাচরণ করলে মূল টিকিটের দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করার এখতিয়ার আছে টিকিট পরীক্ষকদের। ১৯৮০ ইং ৯ নম্বর রেলওয়ে আইনের ৬৯ ধারা অনুযায়ী টিটিইদের এই অধিকার দেয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সরেজমিন সান্তাহার স্টেশনে গিয়ে কথা হয় আসিফ আহমেদের সাথে। তিনি জানান, বেসরকারি চাকরির সুবাদে তাকে প্রতিদিনই নাটোরে যেতে হয়। এ জন্য তাড়াহুড়োর সময় যে ট্রেন সামনে পান সেটাতেই উঠে পড়েন। রেলের টাকা ফাঁকি দেয়ার ইচ্ছে না থাকলেও টিটিইরা টিকিট নিতে এলেই বাড়তি মাশুল (জরিমানা) দিতে হয়। কথা হয় ঢাকাগামী আরেক যাত্রী রুবেল হোসেনের সাথে। তিনি বলেন, ঈদে পরিবার নিয়ে যাওয়া আসার কারণে আগে থেকেই টিকিট কেটে রাখি। কিন্তু অন্য সময় জরুরী ভিত্তিতে কর্মস্থলে যেতে কাউন্টারে টিকিট না পেয়ে বাধ্য হয়ে টিকিট ছাড়াই ট্রেনে উঠতে হয়। কিন্তু সেখানে আসন (সীট) ছাড়াই টিটিইরা টিকিটসহ জড়িমানা আদায় করেন।
সহকারী স্টেশন মাস্টার আব্দুল খালেক জানান, ট্রেন যাত্রীরা অনেকে সময় স্বল্পতাসহ বিভিন্ন কারণে টিকিট ক্রয় করতে পারেন না। এসব দেখার জন্য স্টেশনে টিকিট কালেক্টর (টিসি) থাকে। আর ভ্রাম্যমাণভাবে টিটিইরা ট্রেনে ঘুরে বেড়ান। কিন্তু সান্তাহারে ৬টি টিসির পদে জনবল রয়েছে ৩ জন। আর ৫ টি টিটিই পদের বদলে কর্মরত রয়েছেন ৪ জন। এই কম সংখ্যক লোক দিয়ে কাজ চালানো খুব কষ্টকর।
সান্তাহার রেল জংশনের স্টেশন মাস্টার (গ্রেড-১) রেজাউল করিম ডালিম জানান, এ স্টেশনে গড়ে প্রতি মাসে এক কোটি টাকা আয় হয়। এরমধ্যে যাত্রী ভাড়া, পণ্য পরিবহন ভাড়াসহ বিভিন্ন খাতের টাকা রয়েছে। তবে টিটিইদের সংগ্রহকৃত সব টাকা এর মধ্যে অর্ন্তভূক্ত হয় না। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, একজন টিটিই যাত্রীদের কাছে থেকে রেলভাড়া সংগ্রহ করে যে স্টেশনে নামবেন, সেখানেই জমা দিতে হবে। এ জন্য তাদের আদায়কৃত টাকার হিসাবটা আলাদা থাকে।
Add Comment