দেশের উপজেলা পর্যায়ে নির্মিত ৩ আধুনিক স্টেডিয়ামের মধ্যে সান্তাহার স্টেডিয়াম অন্যতম। এটির কর্তৃত্ব বা দেখ ভাল করা নিয়ে সান্তাহার পৌরসভা ও আদমদীঘি উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার মধ্যে রশি টানাটানি চলছে প্রায় ১৪ বছর ধরে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ স্টেডিয়ামের দায়িত্ব পৌরসভাকে বুঝিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিলেও দীর্ঘ দিনেও সেই নির্দেশ পালন করা হয়নি। এই দীর্ঘ সময়ে খেলাধুলা বা ব্যবহার না করার কারনে স্টেডিয়ামটির বেহাল দশার সৃষ্টি হয়েছে। স্টেডিয়ামের কেয়ার টেকার এক যুগের বেশী সময় বেতন-ভাতা না পেয়ে স্টেডিয়ামটিকে গো-খামার বানিয়েছে।
জানা গেছে, স্বাধীনতার পর থেকে সান্তাহারে খোলা ও অপরিসর মাঠে জেলা ভিত্তিক দলের অংশ গ্রহণে প্রতিবছর সফলভাবে ফুটবল আয়োজন সম্পন্ন হবার প্রোপটে ’৮০ দশকে মরহুম রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের নির্দেশে স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হয়। তখনকার স্টেডিয়াম বলতে শুধু প্রাচীর ঘেরা বড় মাঠ ছিল। ’৯৬ সালে সারা দেশের মধ্যে ৩ উপজেলায় আধুনিক মানের স্টেডিয়াম নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেয় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। এতে প্রথমে নির্মাণ করা হয় সান্তাহার আধুনিক স্টেডিয়াম। প্রায় ৬ একর জমির উপর নির্মিত স্টেডিয়ামে ব্যয় হয় দেড় কোটি টাকা। আধুনিক এই স্টেডিয়ামে পূর্নাঙ্গ প্যাভেলিয়ন করা হলেও গ্যালারী করা হয় সংপ্তি। কমপক্ষে ১০ হাজার দর্শক ধারণ মতার পরিবর্তে করা হয় ১ হাজার ৩ শত ধারন মতার গ্যালারী। এছাড়াও টিকিট কাউন্টার ও পানি নিষ্কাশনের ড্রেন করা হয়নি। স্টেডিয়াম নির্মাণে এই সব বড় সমস্যা থাকা সত্ত্বেও সান্তাহার পৌর ক্রীড়া সংস্থা ফুটবল আসর আয়োজন করতে থাকে। কিন্তু জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের আইনে পৌর ক্রীড়া সংস্থার কোন বিধান না থাকার কারনে বাধা হয়ে দাঁড়ায় উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা। ফলে বন্ধ হয়ে যায় খেলাধুলা সহ সকল কর্মকান্ড। কিন্তু দীর্ঘ দিনেও উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তাগণ স্টেডিয়ামে পদধুলি দেয়নি। এমতাবস্থায় পৌর ক্রীড়া সংস্থার আবেদনের প্রেেিত জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ স্টেডিয়ামের দায়িত্ব সান্তাহার পৌরসভার নিকট হস্তান্তর করার জন্য আদমদীঘি উপজেলা ক্রীড়া সংস্থাকে নির্দেশ দেয়। কিন্তু ১২ বছরেও সে নির্দেশ কার্যকর করা হয়নি। এদিকে, স্টেডিয়াম কর্মচারী বা কেয়ার টেকার আবু সাইদ এক যুগের বেশী সময় ধরে কোন বেতন-ভাতা পান না। এ কারনে সে স্টেডিয়ামে গো-খামার করেছেন। এছাড়া রাতের আঁধারে স্টেডিয়ামে অসামাজিক ও বে-আইনী কার্যকলাপ চলে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। এমতাবস্থায় সান্তাহার শহর সহ পুরো উপজেলার ক্রীড়ামোদী মহল ও ক্রীড়াবিদরা স্টেডিয়ামটি সচল করার প্রয়োজনীয় পদপে গ্রহণ করার দাবী জানিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
এ ব্যাপারে সান্তাহার পৌর ক্রীড়া সংস্থার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা বলেন, তিনি কর্তৃত্ব নিয়ে রশি টানাটানি ও বিদ্যমান ওইসব সমস্যার কথা স্বীকার করেন এবং এই মূহুর্তে শুধু মাঠ খেলা উপযোগী করতে ব্যয় হবে অন্তত ৪/৫ লাখ টাকা। কিন্তু কোন সংস্থান নেই। তিনি অবিলম্বে কমপে ৫ হাজার দর্শক ধারন মতার গ্যালারী, টিকেট কাউন্টার, নিচু বাউন্ডারির উপর ওয়াল ও পানি নিষ্কাশনের ড্রেন নির্মাণ করে স্টেডিয়াম সচল করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে সান্তাহারের গৌরবোজ্জল ফুটবলারসহ সকল ক্রীড়া কর্মকান্ড চালু করার ব্যবস্থা গ্রহণে মহাজোট সরকারের আশুদৃষ্টি কামনা করেন।
এদিকে স্টেডিয়ামের কেয়ার টেকার আবু সাইদ বলেন, গত ১৪ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছি। প্রথম ৩ মাস সান্তাহার পৌর ক্রীড়া সংস্থা প্রতি মাস ৯ শত টাকা করে বেতন প্রদান করে। এরপর উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে কোন বেতন-ভাতা পাইনি। বাধ্য হয়ে গরু-ছাগল পালন করে জীবন ধারন করছি। সেই ৯৬ সালে বিদ্যুৎ সংযোগ নেয়ার পর থেকে বিদ্যুৎ বিল দেয়া হয়নি। ফলে বিদ্যুৎ বিভাগ মাঝে মধ্যে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য আসে। আমি তাদের হাতে-পায়ে ধরে ফিরিয়ে দেই। কারন এতো বড় প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ ছাড়া বসবাস ও দেখভাল করা সম্ভব নয়। কড়ানজরদারি করার পরও চোরেরা রাতের বেলা হানা দেয়। ইতোমধ্যে প্রাচীরের কাঁটা তারের অ্যাঙ্গেল চুরি করে নিয়ে গেছে। পরে সেই চোরদের ধরে মালামাল উদ্ধার করে মামলা দিয়েছি। ফলে ওই চোরেরা আমাকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।
সান্তাহার ডটকম/সান্তাহার ডটকম টিম/১৯-০৪-২০১৬ইং
Add Comment