নাজমুল হক ইমন :: স্বপ্ন তার মানব সেবা। মানুষের জন্য কাজ করে যাওয়া। এলাকার মানুষের পাশে রয়েছেন তিনযুগের বেশি সময়। ইচ্ছা তার এলাকার প্রতিটি ঘরে ঘরে ফিরে আসুক সুখ শান্তি, ঘরের ছেলেরা পড়াশোনায় উচ্চশিক্ষিত হয়ে গড়ে তুলুক শিক্ষিত সমাজ, সচল হোক অর্থনীতির চাকা। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে অনেক কিছুই সম্ভব নয়। আর সম্ভব করার জন্য রাজনীতির খাতায় নাম লেখানো। জনগনের ভালবাসা, জনগনকে নিয়ে পথচলা আর জনগনের সমর্থন পেতে ২২ বছর ধরে রাজনীতি করে যাচ্ছেন তিনি। এখন পর্যন্ত তিনি হাঁটছেন, স্বপ্ন দেখছেন, স্বপ্ন বুনছেন মানবসেবার।
সান্তাহার ইউনিয়নের ছোট্ট একটি গ্রাম কায়েতপাড়া। ১৯৪৮ সালের ১ আগষ্ট সেই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মোঃ আনছার আলী মৃধা। বাবা ওছমান আলী মৃধা পেশায় একজন গৃহস্থ আর মা শাহেজান বিবি ছিলেন একজন গৃহিনী। পাঁচ ভাই আর পাঁচ বোনের মধ্যে তিনি নবম।
প্রতিবেশি গ্রাম উথরাইল প্রাইমেরি স্কুল থেকে প্রাথমিক, সান্তাহার বিপি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, নওগাঁ বিএমসি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থ বিজ্ঞানে অনার্সসহ এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি মেধাবী ছাত্র ছিলেন।
প্রথম থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত ক্লাশের ফার্স্ট বয় এবং এসএসসি পরীক্ষায় অংকে নিরানব্বই নম্বর পেয়ে দৃষ্টান্তস্থাপন করেন। সকলস্তরেই তিনি শিক্ষকদের অত্যন্ত স্নেহের পাত্র ছিলেন। ছাত্র জীবনেই শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে অনেক পুরস্কারপ্রাপ্ত হয়েছেন। অনেক অনুষ্ঠানের সংগঠক ও পরিচালক হিসাবে বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন এবং নিজেও ভাল গান গাইতেন। স্বরচিত জারি গানের জন্য বিশেষ পরিচিতি ছিলেন সেই সময় তার।
স্ত্রী বিলকিল বেগম, কন্যা মাসুমা বেগম এবং দুই ছেলে মাসুম বিল্লাহ ও মারুফ রাব্বীকে নিয়ে তার ছিল সুন্দর সাজানো ছন্দময় পরিবার। কিন্তু এই ছন্দময় দাম্পত্য জীবন বেশি দীর্ঘায়িত হয়নি। মাত্র ছাব্বিশ বৎসর দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত করে দুরারোগ্য ক্যান্সার ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে ২০০২ সালের অক্টোবরে পরলোকে চলে যান স্ত্রী বিলকিস বেগম। মেয়ে মাসুমা বেগম বিবাহিতা; এক ছেলে এবং এক মেয়ে সন্তানের মা তিনি। স্বামী গ্রাফিক্স ইঞ্জিনিয়ার আবদুল বাতেনের সঙ্গে নাগরিকত্ব নিয়ে কানাডায় বসবাস করছে।
বর্তমানে মৃধার সংসারে আবারো সুখ ফিরতে শুরু করেছে দুই ছেলে আর ছেলে বউ এবং নাতিদের ঘিরে। বড় ছেলে মাসুম বিল্লাহ আইটি এক্সপার্ট। তিনি পিএইচডি করতে এখন জাপানে। সঙ্গে তার সহধর্মিনী তানজিলা আফরিনও জাপানে পিএইচডি করছেন; তিনি ফার্মাসিস্ট। তাদের পরিবারে রয়েছে ১ ছেলে। আর ছোট ছেলে মারুফ রাব্বি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লোক প্রশাসন বিভাগে পড়াশোনা শেষ করে এখন বাবার ব্যবসার হাল ধরেছেন। স্ত্রী মুসলিমা আফরোজ আর ২ ছেলেকে নিয়ে তারও ছোট পরিবার।
সান্তাহার ও আশপাশের র্দীঘ এলাকা জুড়ে আনছার আলী মৃধা (মৃধা সাহেব) একজন ভাল মানুষ হিসাবে ব্যাপক পরিচিতি আছে। তিনি একজন দানশীল ও গরীব হিতৈষী বলেও সমাধিক পরিচিত। এলাকার মাদ্রাসা ও মন্দির সমূহে তার অনুদান বিশেষভাবে উলেখযোগ্য। এলাকার গরীব দুঃখীদের মাঝে সাধ্য মতো তার সহযোগীতার হাত সদা উম্মুক্ত। শিক্ষাক্ষেত্রে গরীব মেধাবীদের জন্য তার অনেক সহযোগীতার কথা বেশ প্রচলিত। পাঠ্যবই ক্রয় বা পরীক্ষার ফি বাবদ অনেক গরীব ছাত্রছাত্রী তার সহানুভূতির ছোঁয়া পেয়েছে। কন্যাদায়গ্রস্থ পিতামাতা বা রোগাক্রান্ত গরীব তার সরনাপন্ন হয়ে বঞ্চিত হয়নি।
রাজনৈতিক অঙ্গনে মৃধা সাহেবের আগমন খুব বেশি দিনের নয়। ১৯৯৫ সালের আগে তিনি সক্রিয় রাজনীতির সাথে বা কোন দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না। ৯৫ সালে সান্তাহার এক আকর্ষিক ও ভয়াবহ বন্যায় আক্রান্ত হয়। সে সময় ব্যক্তিগত উদ্যোগে কিছু ত্রান সামগ্রী নিয়ে দূগর্তদের মাঝে নেমে পড়েন। কিন্তু প্রয়োজন এতবেশি যে তার এই সাহায্য সামগ্রী চাহিদার তুলনায় খুবই নগন্য। তার সাধ থাকলেও সাধ্য সীমিত। যদি ক্ষমতার কলম আর সীল তার হাতে থাকতো তাহলে হয়তো অনেক দূর এগুতে পারতেন তিনি।
তার ভাষ্য মতে, এই কারণেই সেদিন হতে তার মাথায় সক্রিয় রাজনীতির চিন্তার আবির্ভাব। ক্ষমতার কলম পেতে হলে জনগনের ভালবাসা ম্যান্ডেট পেতে হবে। তা পেতে হলে একটা বড় রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় আসতে হবে। এই মানসিকতা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে তার বর্তমান উলেখযোগ্য অবস্থান। নবম সংসদ নির্বাচনে বিশেষ কারণে দলের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোট করে জনগনের ভালবাসা সিক্ত পঁচাশি হাজার ভোট পেয়েছিলেন।
মৃধা সাহেব একজন শান্ত, ভদ্র বিনয়ী এবং সদালাপী মানুষ। যেকোনো স্তরের মানুষের সাথে তিনি সহজেই খাপ খাইয়ে নিতে অভ্যস্ত। তিনি হাসতে এবং হাসাতে পটু। কারো ভালো কাজে তিনি আনন্দবোধ করেন এবং কাউকে মাত্রাতিরিক্ত স্বার্থপ্রবন দেখলে তিনি বিরক্ত হোন। কারো নৈতিকস্থলনে ব্যাথিত হোন। দৈনন্দিন অবসরে টিভি দেখেন। খবর ছাড়াও বিনোদন ও আলোচনামূলক অনুষ্ঠান তার প্রিয়। ভারতীয় পুরাতন গানের অনুষ্ঠান পেলে তো কথাই নেই।
বাসী তরকারিতে পিঁয়াজ মরিচসহ পান্তা অথবা পিঁয়াজ মরিচ ও সরিষা তেলে মাখা বাসী ভাত (কড়কড়ে) তার প্রিয় খাবার। তিনি কেমন মানুষ তা জিজ্ঞাস করা হলে তার সোজা উত্তর, ‘সাধারন মানুষ’ এর বাহিরে কিছু হলে তা বলবো ‘জনগন’। দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ও প্রশাসন তার জীবনের স্বপ্ন। এই লক্ষ্য সকলের সাধ্যমত ভূমিকা তিনি কামনা করেন।
সান্তাহার ডটকম/ইমন নাজমুল/১১ জুলাই ২০১৬ইং
Add Comment