সাজেদুল ইসলাম চম্পা:: রেলওয়ে হাসপাতাল নামে এই সরকারী হাসপাতালটি সান্তাহার সরকারী কলেজ রোডে অবস্থিত। বগুড়া গেজেটিয়ার এবং বগুড়াকে নিয়ে লেখা সবচেয়ে প্রাচীন গ্রন্থ মিসের আলী রচিত ‘বগুড়ার ইতিকাহিনী’ তে এই রেলওয়ে হাসপাতালটি ১৯৪৩ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সেনা বাহিনীর সামরিক হাসপাতাল হিসাবে প্রতিষ্ঠিত বলা হলেও এলাকার বয়োজোষ্ঠদের দাবী, এই হাসপাতালটি ৩০ এর দশকে রেলওয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তখন ভারত উপমহাদেশের একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম ট্রেনে করে আহত সৈন্যদের বিভিন্ন স্থান থেকে তৎকাণীন এ আধুনিক সুযোগ সুবিধাসমৃদ্ধ হাসপাতালটিতে আনা হতো।
উল্লেখ্য, বর্তমান রথবাড়িতে নিহত খ্রিষ্টানসৈন্যদের একটা কবরস্থানের কথাও বগুড়ার ইতিকাহিনীতে পাওয়া যায়। সান্তাহার জংশনে তখন থেকেই ব্রডগেজ ও মিটারগেজ রেল সুবিধা থাকার জন্য ভারতবর্ষের যে কোনো প্রান্ত থেকেই এখানে আসা সহজলভ্য ছিল। এমন কি তৎকালীন আসাম বা শিলিগুড়ির চা-বাগানে কর্মরত ম্যালেরিয়া আক্রান্ত শ্রমিকদের এই হাসপাতালে আনা নেয়া হতো।
বন্ধ প্রায় এই প্রাচীন হাসপাতালটিতে বর্তমানে ১৪টি পুরুষ এবং মহিলাদের জন্য ৬ শয্যার কাগজে কলমে থাকলেও বাস্তবচিত্র করুন। অথচ এখানে অতীতে তিন শয্যাসহ একটি ওয়ার্ড শুধু ছোঁয়াচে রোগীদের জন্যই আলাদা করা ছিলো। একজন সহকারী সার্জন (সপ্তাহে একদিন), ফার্মাসিস্ট একজন নার্স চারজন, একজন ড্রেসার, ওয়ার্ড এটেন্ডেন্ট তিনজন, আয়া দুইজন এবং দুইজন সুইপার কাগজে কলমে থাকলেও বাস্তবচিত্র ভিন্ন। এ হাসপাতেরই একটি অংশ মাতৃমঙ্গল ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র ছিল, সেখানে নার্সদের প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা থাকলেও সে সকল মঙ্গল ব্যবস্থা এখন অমঙ্গল হয়ে ভবনগুলো পরিত্যক্ত, মাদকসেবীদের অভয়ারন্য। অথচ ৩০ থেকে ৭০ দশকেও এ অঞ্চলের রোগ শোকে পীড়িত মানুষদের একমাত্র ভরসাস্থল ছিল এই বৃটিশদের তৈরি লাল দালানের ভবনগুলো।
লেখা ও ছবি:: সাজেদুল ইসলাম চম্পা, লেখক ও রাজনীতিবীদ
>> সান্তাহার ডটকম/ইএন/১৪ মার্চ ২০১৭ইং
Add Comment