প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন

রেলওয়ে জংশন শহর সান্তাহার : উদ্বোধনের ১২ বছরেও চালু হয়নি হাসপাতাল

সান্তাহার শহরবাসীর জীবনমান উন্নয়নের প্রয়োজনীয় হাসপাতাল, ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, বাসটার্মিনাল, শিশুপার্ক, অডিটরিয়াম, শহরকে থানা ঘোষণাসহ শহরবাসীর জন্য প্রয়োজনীয় দাবিকৃত প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘ দেড়শ’ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে শিশু-কিশোর, আবাল-বৃদ্ধ-বনিতাসহ সর্বস্তরের মানুষের জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত ঘটছে বলে অনেকে মত প্রকাশ করেছেন। উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহত্তম রেলওয়ে জংশন শহর সান্তাহার। দেড়শ’ বছরের পর এ পুরাতন শহরে উল্লেখযোগ্য আর কোনো উন্নয়ন হয়নি। যেটুকু উন্নয়ন হয়েছে সেটাও রেলের ভৌগোলিক কারণে হয়েছে মাত্র। প্রায় দেড়শ’ বছর আগে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা চালুর মধ্য দিয়ে এ রেল জংশন শহরের আত্মপ্রকাশ ঘটে। রেলের ভৌগোলিক কারণে সে সময় এখানে গুরুত্বপূর্ণ অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়। উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলো হলো রেলওয়ের দুর্নীতি দমন জেলা অফিস, রেল ইঞ্জিনের জ্বালানি পানি ও মেরামতের লোকোশেড, উত্তরাঞ্চলের মালামাল পরিবহনের জন্য ট্র্যাশেপ্টম্যান ইয়ার্ড, সর্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য পাওয়ার হাউজ, টেলিফোন এক্সচেঞ্জ। যা কালের বিবর্তনে প্রতিষ্ঠানগুলো বিলুপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া ৬০ লাখ টন গম সংরক্ষণ ধারণক্ষমতা সম্পন্ন সাইলো, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কেন্দ্রীয় খাদ্যগুদাম (সিএসডি), এলএসডি, বাফার সার গুদাম, সরকারি মোটরযান মেরামতের সড়ক ও জনপথের বিভাগীয় কারখানা, মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট প্লাবন ভূমি উপকেন্দ্র, কাস্টম অফিস, খেলাধুলার জন্য রয়েছে একটি আন্তর্জাতিকমানের স্টেডিয়ামসহ এখানে অনেক সরকারি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। ২০০৬ সালে তৎকালীন সরকার এলাকার মানুষের চিকিৎসাসেবার জন্য শহরের রথবাড়িতে ২০ শয্যার একটি হাসপাতাল নির্মাণ করলেও রাজনৈতিক যাঁতাকলে পড়ে চিকিৎসাসেবা চালু না হতেই ধ্বংসের মুখে পরেছে হাসপাতালটি। এছাড়াও ভালো রেল যোগাযোগের কারণে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বর্তমান সরকার ২৫ হাজার টন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একটি অত্যাধুনিক রাইস সাইলো ও ৫০ মেগাওয়াট পিকিং বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করেন। এ শহরবাসীর জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য দাবিকৃত প্রয়োজনীয় কিছু প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘদিনেও বাস্তবায়ন করা হয়নি। শহরবাসীর দাবিকৃত অতি প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠানগুলো হলো চিকিৎসাসেবার জন্য তৈরি হাসপাতাল চালু, সান্তাহারকে থানা ঘোষণা, ফায়ার স্টেশন, অডিটরিয়াম, বাসটার্মিনাল, শিশুপার্ক, লাইব্রেরি, জংশন স্টেশনকে সংস্কার করাসহ আধুনিকমানে রূপান্তরিত করা। এদিকে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে যেসব প্রতিষ্ঠান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সেগুলো হলো আন্তর্জাতিকমানের স্টেডিয়াম ও নির্মাণ কাজ শেষ হওয়া ২০ শয্যার হাসপাতাল। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এবং খেলাধুলার ব্যবস্থা না থাকায় অবহেলা ও অযতেœর কারণে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে স্টেডিয়ামের আসবাবপত্র, মাঠের মধ্যে গজিয়ে উঠেছে বিভিন্ন ধরনের গাছ ও আগাছা এবং খোয়া যাচ্ছে লাখ লাখ টাকার লোহার সামগ্রী। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রাইমারি ও হাইস্কুলের ফুটবল খেলাসহ সরকারি অনেক অনুষ্ঠান করা হলেও বছরে একদিনও এই স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠান করা হয় না। ফলে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে আন্তর্জাতিকমানের স্টেডিয়াম। এছাড়া নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়া ২০ শয্যাবিশিষ্ট আধুনিক হাসপাতাল। শহরের রথবাড়ি এলাকায় এক একর জমির ওপর ৩ কোটি ৩৩ লাখ ১২ হাজার টাকায় হাসপাতালটি নির্মাণ করা হয় এবং ২০০৬ সালের ২২ অক্টোবর তৎকালীন সরকারের স্থানীয় এমপি ঢাকঢোল পিটিয়ে হাসপাতালটি উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পর ১২ বছরেও এ হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা চালু না হওয়ায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এর মূল্যবান সম্পদ, হাসপাতাল ভবনের কক্ষগুলো হয়েছে মাদকসেবী ও যৌনকর্মীদের আড্ডাখানা। এ বিষয় নিয়ে শহরের নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক সান্তাহার প্রেসক্লাবের সভাপতি সাংবাদিক গোলাম আম্ভিয়া লুলুর সাথে কথা বললে তিনি বলেন স্বাধীনতার পরবর্তী সময় একাধিক সরকার পরিবর্তন রাজনৈতিক নেতাদেরও অবহেলা এবং ষড়যন্ত্র করে রেলকে ধ্বংস করার চেষ্টার কারণে সান্তাহারে রেলের অনেক নামী-দামি প্রতিষ্ঠান ছিল সেগুলোকে বিলুপ্তি করা হয়েছে। রেলকে ধ্বংস করার চেষ্টা করা না হলে এখানে রেলের অনেক নামী-দামি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতো, তখনই এ শহর আরোও উন্নতির দিকে এগিয়ে যেত। বর্তমান সরকার রেলের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে এবং রেলকে নিয়ে একটি আলাদা মন্ত্রণালয় গঠন করে রেলে উন্নয়নমূলক কাজ করে যাচ্ছে, আশা করি আমাদের জংশন শহরে এবার উন্নয়ন হবে। সান্তাহার পৌর সভার সাবেক মেয়র ফিরোজ মো. কামরুল হাসান বলেন, সান্তাহার রেল জংশন সমকক্ষ পরবর্তী পুর, ঈশ্বরদী, রহনপুরসহ অনেক জংশন শহরকে থানা করা হয়েছে। আমাদের এই গুরুত্বপূর্ণ জংশন শহরকে থানায় রূপান্তরিত করা হলে আমরাও একটি পরিপূর্ণ শহর পেতাম।